স্টাফ রিপোর্টারঃ গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ এবং গরমের প্রভাবে ভোলায় শিশুদের বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নিউমোনিয়ার প্রকোপ। এতে হাসপাতালে শিশু রোগীদের চাপ বাড়ছে। কিন্তু স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে একটি বেডে গড়ে ৩/৪ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। গত এক সপ্তাহে ভোলা সদর হাসপাতালে ঠা-াজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৮১ জন শিশু। যারমধ্যে ৫৪ জন ছিল নিউমোনিয়া আক্রান্ত। এরমধ্যে মারা গেছে একটি শিশু। শিশুদের হঠাৎ করেই নিউমোনিয়ার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের ঠিকমত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৩০টি। বর্তমানে এখানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮১ জন যাদের মধ্যে ৫৪ নিউমোনিয়া আক্রান্ত। বেডে জায়গা না পেয়ে অনেকেই গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ এবং গরমের কারনে শিশুদের চাপ বেড়ে গেছে। তবে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত অভিভাবকরা। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু রোগীদের ভিড়। একেকটি বেডে গড়ে ২/৩ জন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একদিকে গরমের প্রভাব অন্যদিকে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে। নার্সরাও তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। চরফ্যাশন থেকে আসা ৮ মাস বয়সের এক শিশু মা রিয়া বেগম বলেন, শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে, তাকে চরফ্যাশন হাসপাতাল থেকে ভোলায় নিয়ে আসছি, কিন্তু ভোলা হাসপাতালে এসে দেখছি কোন জায়গা নেই, সব বেডে রোগী। তাই বাধ্য হয়ে ভিড়ের মধ্যেই গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছি। আরেক শিশুর মা রিপা আক্তার বলেন, গত ৪ দিন ধরে ভোলা হাসপাতালে রয়েছি শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। আমাদের এ বেডে ৩ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে, আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। একই কথা জানালেন রোগীর অন্য স্বজনরাও। সদরের রতনপুর থেকে আসা শিশু রোগীর মা নুর নাহার বেগম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্তু অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর অভিভাবক জাহিন ও শাহনাজ বেগম বলেন, হঠাৎ করে শিশুদের অসুখ বাড়ছে। আমরা এ নিয়ে খুবই চিন্তিত। এদিকে গত এক সপ্তাহের অধিক সসময় ধরে শিশু রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। আর ধারণ ক্ষমতার অধিক রোগী থাকায় শিশুদের চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্বজনদের। শিশু ওয়ার্ডের নার্স নাসরিন আক্তার বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনে শিশুদের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য সময়ের তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে শিশু রোগীদের চাপ একটু বেশি। তারপরেও আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. নিরুপম সরকার সোহাগ বলেন, গরমের কারনে শিশুদের রোগ বাড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে যেসব রোগী আছে তার বেশীরভাগ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা রোগী। এরা সবাই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। অনেক সময় দেখা যায় পরিবেশগত কারনেও শিশুদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও নিউমোনিয়া হয়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এমনটি হচ্ছে। বর্তমানে চাপ বেশি তবুও আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ রয়েছে। আপাতত সমস্যা নেই। তিনি আরও জানান, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে গত ৬ মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ১৭৩৩ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী, যাদের মধ্যে মারা গেছে ১৪ জন। গত এক সপ্তাহে চিকিৎসা নেওয়া ৮১ জন রোগীর মধ্যে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর।