বরিশাল নগরীর ৬নং ওয়ার্ডস্থ হাটখোলা এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অত্যন্ত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় সাত জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার ( ৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে নগরীর হাটখোলা সংলগ্ন এ করিম আইডিয়াল কলেজের সামনে ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- ওই এলাকার মৃত ইসমাইল সিকদারের ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রিন্স মাহমুদ সোহেল (৩২), তার মা নুরজাহান বেগম (৫২), তার স্ত্রী আশা মনি আক্তার (২৫), একই এলাকার রকি শেখের স্ত্রী আরজু বেগম (৪০), মো: জুলহাসের স্ত্রী আমির জান বেগম (৬০)। অপরদিকে একই এলাকার মোবারক সিকদারের ছেলে আল-আমিন সিকদার (৩২), তার স্ত্রী সেতু বেগম (২০) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্যান্যর্যা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়- দীর্ঘদিন ধরে প্রিন্স মাহমুদ সোহেলের সাথে আল-আমিনের বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিন তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেই ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। গতকাল রোববার রাতে বিরোধ মিমাংসার জন্য দুই পক্ষের সাথে কথা বলতে তাদের বাড়িতে যান ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খান মোঃ জামাল হুসাইন। তবে বিষয়টি মিমাংসায় ব্যর্থ হন তিনি। এ সময় তার উপর সোহেল ও তার স্ত্রী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তার ভাতিজাকে আহত করে এবং তার যাওয়ার ঘটনাটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন সোহেল। এতে করে আরও ক্ষিপ্ত হন কাউন্সিলর সমর্থকরা। এ নিয়ে রাতেই দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে সোমবার বেলা ১১ টার দিকে ভিডিও ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে পুনরায় সোহেলের ও আল-আমিনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর থেকে কয়েক দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এ সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পরে দুই পক্ষের লোকজন। ঘন্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। পরে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। স্থানীয়দের সহায়তায় আহতের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর খান মোঃ জামাল হুসাইন বলেন- বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমি দুই পক্ষে সাথে বসার জন্য গিয়েছিলাম। উল্টো এক পক্ষের লোকজন অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমি বাসায় না থাকায় স্থানীয়রা আমাকে ফোন করে জানায় প্রিন্স মাহমুদ সোহেল ও জসিম বিশ্বাস, অন্তু, ইমনসহ বেশ কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে আমার বাসার দিকে যাচ্ছে। পরে আমি ওসি সাহেবকে কল করে সব জানাই। তারা এসে সবাইকে শান্ত করে রাতে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে আবার শুনি সোহেল ওরা আল-আমিনের বাসায় হামলা করে তাদের কুপিয়ে জখম করেছে। সোহেল এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে।
আহত প্রিন্স মাহমুদ সোহেল বলেন- আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি এবং সিটি নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনও করেছি। খান জামাল সে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছি। আসার পর থেকে তিনি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার যত মাদক, জুয়ার আসর এগুলা সে পরিচালনা করে। এতে আমি বাঁধা দিয়ে আসছি। এর পরিপেক্ষিতে তাদের সাথে বিরোধ তৈরী হয়। তখন একটি ঝামেলায় আমার নামে মামলাও করা হয়। সেই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে আসার পর গতকাল রাতে খান জামালের নেতৃত্বে জালাউদ্দিন, এনায়েত, আল-আমিন, হাসান, আব্বাস মোহরী, রুবেল, সাইফুল, সগির জনি, রবিন, মুন্না, সবুজ, লাকরি রুবেলসহ এক দেড়শ লোক আমার বাড়িতে হামলা চালায়। তখন আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। সকালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে খান জামাল আমার উপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় আমার পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। আমি এর বিচার চাই।
আহত আল-আমিন বলেন- আমাদের এক খণ্ড জমি নিয়ে সোহেলের সাথে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি রাত সাত টায় আমার উপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। সে বিষয় নিয়ে আমি কোতয়ালী থানায় মামলা করেছি। আজকে সকালে যখন আমি বাসায় ছিলাম তখন আমার স্ত্রী দরজা খুললে তারা চাপাতি নিয়ে সোহেল ও তার দুই ভাই হামলা চালিয়ে আমাকে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় আমার স্ত্রী ছুটে আসলে তাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে সন্ত্রসীরা। এমনকি আমার ছোট বাচ্চাকে তুলে আচার মারলে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রসীরা আমার মোবাইল ফোন, আমার স্ত্রীর গলার চেইন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমার উপর দুই বার হামলা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান- দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক দফা ঝামেলা হয়েছে। এরা এলাকার পরিবেশ অশান্ত করে তুলছে। এদের কারণে সাধারন মানুষ সব সময় আতঙ্কে রয়েছেন। অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক বলেন- খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটানায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’