স্টাফ রিপোর্টারঃভোলার মেঘনা এবং তেঁতুলিয়ার নদীর তাঁজা ইলিশ যাবে ঢাকায়। ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন কাঙ্খিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে লঞ্চে করে ভোলার ইলিশা রাজধানীতে পৌঁছাতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু ব্যবহার করে সড়কপথে মাত্র ৫ থেকে ৬ঘন্টায় ভোলার ইলিশা পৌঁছে যাবে রাজধানীর পাইকারি আড়তে, এতে করে মাছের গুণগতমান এবং স্বাদ থাকবে সঠিক কমবে পরিবহন খরচ। ভোলার মৎস্য ব্যবসায়ী, আআড়ৎদার এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবি সমিতি, ভোলা পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে দেশের মোট আহোরিত ইলিশের প্রায় ৩৫ ভাগ ভোলা সংলগ্ন মেঘনা নদী, তেঁতুলিয়া নদী এবং সাগর উপকূল থেকে। এই ইলিশ শিকার এবং ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন ভোলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমান সময়ে ভোলার ২১৬টি মাছ ঘাট থেকে দৈনিক গড়ে একশত পঞ্চাশ মেট্রিক টন ইলিশ যায় রাজধানীর। লঞ্চে করে এই ইলিশ ঢাকায় পাঠাতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু ব্যবহার করে মাত্র ৬ ঘন্টায় সড়কপথে ভোলার ইলিশা ঢাকার বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হবে। ফ্রিজিং না করার কারণে ইলিশের রং এবং স্বাদ থাকবে অটুট, কমবে পরিবহন ব্যয়।
কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ও মৎস্য আড়তদার এরশাদুল হক জানান, বর্তমানে ৭০০ কেজির এক ঝুড়ি ইলিশ ঢাকায় পৌঁছাতে ব্যয় হয় চার হাজার টাকা, সড়কপথে এরকম ঝুড়ি নিয়ে ট্রাকে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা।
লালমোহনের মঙ্গল শিকদার মাছ ঘাটের আড়তদার আবুল কাশেম মহাজন বলেন, লঞ্চে মাছ পাঠিয়ে আমাদেরকে টেনশনে থাকতে হয়, সঠিক সময়ে লঞ্চ ঢাকায় পৌঁছাবে কিনা? সকালে আড়তে মাছ পৌঁছাতে পারবো কিনা? পদ্মা সেতুর চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের সেই টেনশন দূর হবে।
ভোলার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক জহুরুল ইসলাম নকীব বলেন, দ্বীপজেলা ভোলার নদীর ইলিশের উপর নির্ভরশীল, শুধু ভোলা থেকে ৩৫ ভাগ ইলিশ আহোরিত হয়, সেই ইলিশ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকামে পাঠাতে বরফ দিয়ে ফ্রিজিং করতে হয় তাতে যেমন অনেক টাকা ব্যয় হয় পাশাপাশি ইলিশের রং এবং স্বাদের পরিবর্তন ঘটে। পদ্মাসেতু চালুর মধ্য দিয়ে সড়কপথে ভোলার ইলিশা দ্রুত পৌঁছানো যাবে রাজধানীতে। এতে করে রাজধানীবাসী পাবে তাজা ইলিশের স্বাদ আর ভোলার অর্থনীতিতে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে মনে করছেন ভোলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হওয়াতে আমাদের এই দক্ষিণ অঞ্চলের বিশেষ করে ভোলার ইলিশসহ পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ভোলার ইলিশ এখন খুব সহজেই পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় ও সময় কম লাগবে। যা ব্যবসায়ীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা এনে দিবে। তাই পদ্মা সেতু ভোলাবাসীর জন্য অনেক বড় মাইলফলক ও প্রাপ্তি।