সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: এবারে আমের রাজধানী খ্যাত নওগাঁর সাপাহার হতে ৩ মেট্রিক টন সুমিষ্ট আম রফতানি হচ্ছে কুয়েত ও নেপালে। আমগুলো যাচ্ছে উপজেলার জয়পুর গ্রামের তরুণ উদ্যেক্তা জিয়াউর রহমানের এন কে আর এগ্রো ফার্ম হতে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যেপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি কার্যক্রমের আওতায় ও উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগীতায় ৩ মেট্রিক বারি-৩ জাতের আম দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাতে আম পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য নারায়নগঞ্জ শ্যামপুরে পাঠানো হয়। শুক্রবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্যাকেটজাত হবার পর আমগুলো বিমান যোগে নেপাল ও কুয়েতে পাঠানো হবে। আম রফতানি করতে সহযোগীতা করেছেন নর্থবেঙ্গল এগ্রো ফার্মের পরিচালক কৃষিবীদ এরশাদ আলী। সাপাহার উপজেলার এন কে আর এগ্রো ফার্ম- এর মালিক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমানের প্রথম চালানে ৩ মেট্রিক টন ‘আম্রপালি’ আম যাচ্ছে কুয়েত ও নেপালে।
তরুণ উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস মেনে নিরাপদ আম উৎপাদন করে থাকেন । এছাড়াও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আমচাষী হিসেবে বেশ সুনাম আছে এলাকা ও এলাকার বাইরে। তিনি ১২০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা বাগানে প্রায় আড়াই হাজার আমগাছ রয়েছে। যার মধ্যে ৬০বিঘা জমির আম ফ্রুট ব্যাগিং করা। তার বাগানে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ ছাড়াও রয়েছে বিদেশী জাতের আমগাছ।
তরুণ উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমান বলেনন, “আমি গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস মেনে নিরাপদ আম উৎপাদন করি। বিদেশে রপ্তানির উদ্যেশ্যে ৬০বিঘা জমিতে নানা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করেছি। আমার নিজের ছেলে মেয়ে খাবে এই চিন্তাধারা করে আমি নিরাপদ আম উৎপাদন করে থাকি। ফ্রুট ব্যাগিংয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন রোগবালাইমুক্ত আমই বিদেশে যায়। এরপরও যেসব আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে, সেগুলো ঢাকাতে পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে আমে কোনো রোগবালাই বা কীটনাশক আছে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়। এরপর তা বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়।”
তিনি আরোও জানান, কুয়েত ও নেপাল ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে তিনি আমের অর্ডার পেয়েছেন। ক্রমান্বয়ে সিস্টেম মেনে আমগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ‘সাপাহারের আম যাচ্ছে বিদেশে। এটা খুবই খুশির খবর।তরুণ উদ্যেক্তা জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে বিদেশে আম যাচ্ছে এটি সাপাহারের জন্য খুবই আনন্দদায়ক। এর আগে সোহেল রানার মাধ্যমে এ অঞ্চল থেকে দেশের বাইরে আম পাঠানো শুরু হয়েছে। আশা করি, জিয়াউর রহমান সহ অন্যান্য উদ্যেক্তাদের দেখে ভবিষ্যতে অন্য চাষিরাও বিদেশে আম পাঠাতে উৎসাহী হবেন।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে কি বিদেশে আম রফতানী করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের সাপাহারের আম বেশ সমাদৃত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানী করার জন্য পর্যাপ্ত আম আমাদের রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে রপ্তানি উপযোগী প্যাকেজিং হাউস না থাকা একটি বড় সমস্যা। এ ছাড়া বর্তমানে একমাত্র নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরে আমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং আমে রোগবালাই থাকলে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট করানো হয়। এসব সুবিধা স্থানীয় পর্যায়ে নিশ্চিত করা হলে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে চাষিদের আরও সুবিধা হতো।’
সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাপলা খাতুন বলেন, ‘চলতি বছরে এই উপজেলায় ১০হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম চাষের জন্য উপজেলার ১৫ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমজুড়েই এই চাষিদের বাগানে আম উৎপাদনের প্রক্রিয়া আমরা দেখভাল করেছি। এই চাষিদের উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত আম বিদেশে পাঠানোর জন্য উপযুক্ত।’
তিনি আরও বলেন, যে আম দেশের বাজারে চার হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে, সেই আম রপ্তানিকারকদের কাছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন চাষিরা।যাতে করে অনেকটাই লাভবান হচ্ছেন উদ্যেক্তারা।”
আম রফতানির উদ্বাধন শেষে উদ্যোক্তা জিয়াউর রহমানের উৎপাদিত নিরাপদ আমের বাগান পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আল মামুন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ শাপলা খাতুন, উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম।