রিপন রানা বরিশাল <<>>বরিশালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় পূর্ব ও দক্ষিনঞ্চলের রোগীরা। বিভাগীয় শহর বরিশাল দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সমুদ্র উপকূলীয় বিভাগ। বরিশালের ৬ টি জেলার মোট ৩৯ টি উপজেলা রয়েছে। আর প্রতিটি জেলা -উপজেলার রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স যোগে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। পটুয়াখালী থেকে রোগী নিয়ে আশা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর চিকিৎসা শেষে পটুয়াখালী রওয়ানা হলে দপদপিয়া টোল প্লাজার সামনে আটকে দেওয়ার অভিযোগ করেন। পটুয়াখালীর অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার নুরুল করিম তিনি বলেন, বরিশালের অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ, বেল্লাল,কাওসারসহ একাধিক ব্যক্তীরা টোল প্লাজায় বসে জরিমানার নামে তাঁরা চাঁদাবাজি করছে। এছাড়াও, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার রবিউল ইসলামের মা অসুস্থ হওয়ায় তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে, রোগীর কাজ থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা রাখেন। বরগুনার অ্যাম্বুলেন্স চালকদের অভিযোগ, বরগুনা থেকে বরিশাল রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো বরিশাল থেকে ফেরার পথে বরিশাল মালিক সমিতির কাছে জিম্মি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়। চাঁদা না দিলে অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর ও আটকে দেওয়া হয়। অপরদিকে বরিশালের অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির দাবি, বরগুনায় বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গেলে বরিশাল ফেরার পথে বরগুনা থেকে কোনও রোগী তুলতে দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার লিটন মৃধা বলেন, বরগুনা জেলার অ্যাম্বুলেন্স বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে রোগী নিতে পারেন না। বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে জরিমানা নামের চাঁদাবাজি করে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি। তিনি আরো বলেন, গত (১৪মার্চ)বরগুনার একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিয়ে,রোগী ইসমাইল বিহারীর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা জরিমানার নামে চাঁদা নিয়েছে। বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি। এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করলে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি আমাকে ফোন করে অশ্রাব্য গালাগালি করে ও হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে উল্টো উকিল নোটিসও পাঠায়। আমি ওই গালিগালাজের ফোন রেকর্ড সংরক্ষণ করে রেখেছি। আমরা রোগীর সেবা দেই কিন্তু এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ না পেলে আমরা রোগীদের সেবা দিব কিভাবে। এর থেকে পরিত্রাণ চায় সকল অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা। এছাড়াও তিনি আরও বলেন,বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নাম ভাঙ্ীয়ে এসব সিন্ডিকেট করছে, তবে এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বন্ধে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। গত(১৭মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির লোকজন বরগুনাগামী ‘হাওলাদার’ নামের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স আটকে ১৫০০ টাকা চাঁদা নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যাম্বুলেন্সচালক সজিব। চালক সজিব বলেন, ‘প্রতিদিনই দপদপিয়া সেতু সংলগ্ন টোলপ্লাজা এলাকায় বরগুনাগামী অ্যাম্বুলেন্স আটকে জরিমানা নামের চাঁদাবাজি করে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি। শেবাচিম এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর মজিবুর রহমানের নাম ভাঙিয়ে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম, সাধারণ সম্পাদক সজিব মিয়া ও তাদের লোকজন মিলে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তবে এই চাঁদা দিতে কেউ রাজি না হলে গালাগালি, মারধর এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরসহ গাড়ি শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আটকে রাখে তারা।’ এদিকে চাঁদাবাজির শিকার এক রোগীর ভুক্তভোগী স্বজন জানান, তাদের ঝামেলা কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার মাঝপথে গাড়ি পাল্টাতে হয়। এই ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটি বিভাগের সকল অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সমন্বয় গঠন করা হয়েছে। তাই সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সকল কার্যক্রম চলছে। তবে বরগুনা জেলার কিছু প্রভাবশালীরা সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কর্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই তাদের সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।’ জরিমানর বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বিভাগ জুড়ে আমাদের একটি নিয়ম আছে। যেমন- বরিশাল দিয়ে যদি কোনও অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে বিভাগের অন্য জেলায় যায় তাহলে তারা ফেরার পথে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে। অন্যথায় তাদের জরিমানা করা হবে। ঠিক একইভাবে যদি বিভাগের জেলাগুলো দিয়ে বরিশালে কোনও রোগী নিয়ে আসে তাদের রোগী রেখে খালি অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে। কিন্তু বরগুনা জেলার অ্যাম্বুলেন্সচালকরা এবং মালিকরা এই বিষয়টি মানছে না। তারা উল্টা রোগী নিয়ে বরগুনায় ফিরছে, যার প্রেক্ষিতে তাদের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।