ভোট-ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে আরেকটি সংগ্রাম করতে হবে
রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, জালেমের বিরুদ্ধে রক্ত ঝরিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো। স্বাধীনতার ৫১তম বছরেও বাংলাদেশ জালেম গোষ্ঠির কবল থেকে মুক্তি পায়নি। যারাই ক্ষমতায় গেছে তারা জবর দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। জনতার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কারসাজী করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। প্রমাণ হয়েছে এরা ব্যর্থ। এই অপশক্তি আবারো ক্ষমতায় থাকার এবং ক্ষমতায় যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। এদেরকে রুখতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ভোট-ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে আরেকটি সংগ্রাম করতে হবে।
আজ শনিবার, বগুড়ার সুত্রাপুর কেন্দ্রীয় মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই উপস্থিত লাখো জনতাকে সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশ ভালো নাই। বাজারদর নির্ধারণ হওয়ার কথা চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই এসেছে যে, চাঁদাবাজী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম ও ব্যবসায়ীদের লোভের নোংরা খেলায় বাড়ছে দ্রব্যমূল্য।
৯২% মুসলমানের দেশে মাদককে সহজ করে জাতিকে মাতাল বানানোর পায়তারা করা হচ্ছে। শিক্ষা সিলেবাস থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দিয়ে ডারউনের ভুল থিউরি পড়ানো হচ্ছে। শ্বেতপত্রের নামে মাদরাসা ও উলামাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, অথচ এর প্রতিবাদ করতে গেলে বাধা দেয়া হচ্ছে। ইভিএমে ভোটের নামে ভোট জালিয়াতির রাস্তা পরিস্কার করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতার ৫১ তম বছরে এসে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে।
উত্তর বঙ্গের প্রবীন আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুল হক আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনই আরো বলেন, বাংলাদেশে আজকের যে দুরাবস্থা; তার কারণ ভুল রাষ্ট্রীয় নীতি ও অযোগ্য-অসৎ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আগামী নির্বাচনে যদি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় যথার্থ নীতি ও যোগ্য-সৎ নেতৃত্ব বাছাইয়ে ব্যর্থ হই তাহলে স্বাধীনতার সুফল অধারাই থেকে যাবে।
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বোধ-বিশ্বাসকে সামনে রেখে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সমাবেশে তিনি ১৫টি দাবী উপস্থাপন করেন।
১. যেকোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. দেশে মদ ও সকল ধরণের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিকক্যবাদী সকল ধর্ম বিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরী বাদ দিতে হবে।
৬. কারান্তরিণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৭. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৮. সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচন কালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৯. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।
১০. নির্বাচনে সকল দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরী করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
১১. দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
১৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
১৪. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
১৫. সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
বিভাগীয় সম্মেলনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাতপাখাকে বিজয়ী করতে একযোগে সকলকে কাজ করতে হবে। সমগ্র দেশ দুর্নীতির অতল সাগরে ডুবে আছে।
সরকারের দায়িত্বশীলরা স্বীকার করে সর্বত্র দুর্নীতি। আওয়ামীলীগ বা বিএনপি দিয়ে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শাসন ছাড়া জাতির মুক্তি আসতে পারে না।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলাম ছাড়া মানবতার মুক্তি নেই; তাই জীবনের সর্বত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় দেশের ইসলাম প্রিয় জনগণকে ইসলামী আন্দোলনের পতাকাতলে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজ সংকটাপন্ন, জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা এবং তাবেদার শক্তি দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে সমাজ ঐক্যদ্ধ হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তীব্র গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান, ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারী জেনারেল শেখ মুহাম্মদ আল আমীন, বগুড়া জেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি মুফতী মুহিবুল্লাহ, পাবনা পশ্চিম জেলা সভাপতি অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ, রাজশাহী জেলা সভাপতি মাওলানা হুসাইন আহমদ, নাটোর জেলা সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ জেলা সভাপতি মাস্টার আশরাফুল ইসলাম, পাবনা পূর্ব জেলা সভাপতি মাওলানা সুলাইমান, জয়পুরহাট জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সভাপতি মাওলানা আলী আহমদ, বগুড়া জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।