স্টাফ রিপোর্টারঃ সহায় সম্বল কিছুই ছিলোনা সূর্যবানু ও জোনাকিদের। সারাদিন কায়িক পরিশ্রম শেষে ফিরতে হতো অন্যের ঘরে। এখন প্রতিদিন ফিরতে পারেন নিজ ঘরে। শুধু ঘরই নয়, আছে নিজ নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা। ভোলার চরফ্যাশনের চর মানিকা ইউনিয়নের চরকচ্ছপিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাই হয় সূর্য বানু ও জোনাকির। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর যেন তাদের স্বপ্নের ঠিকানা। পরম নির্ভরতার স্থান। আশ্রয়ন প্রকল্পের পাকা ঘর তাদের জীবন মান বদলে দিয়েছে। সূর্যবানু বলেন, জমি, ঘর কিছুই ছিলনা। চর আইচা গ্রামে অন্যের বাড়িতে থাকতাম। সেখান থেকে ঢাকায় যাই। স্বামী শাহজাহান ভ্যান চালাতো, আমি অন্যের বাসায় জি এর কাজ করতাম। ঘর ভাড়া করে ৩ ছেলে ১ মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্ট করে থাকতাম। বড় ছেলে ইব্রাহিম বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। মেয়ে শারমিনকে কিশোর গঞ্জে বিয়ে দিয়েছি। বয়সের ভারে স্বামী কর্ম অক্ষম হলে ঢাকা থেকে এলাকায় চলে আসি। আবারো অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেই। স্বপ্নেও ভাবিনি শেষ বয়সে জমিসহ নিজের ঘর হবে। বর্তমানে স্বামী ও ছোট দুই ছেলে রুবেল ও শাহাদাতকে নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের পাকা ঘরে সূখ শান্তিতে আছি। জমিসহ পাকা ঘর দেয়ায় শেখ হাসিনার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। জোনাকি বলেন- স্বামী বাবুল মারা গেছে কয়েক বছর আগে, দুই মেয়ে মিনজু (৮) মিম (৫) কে নিয়ে চর মানিকা কলুর বাজার এলাকার অন্যের বাড়িতে থাকতাম। কখনো কল্পনা করতে পারিনি যে, আমি জমিসহ একখানা নতুন পাকা ঘর পাবো। পাকা ঘরে থাকতে পারবো। ঘর পেয়ে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সূর্যবানু ও জোনাকির মতো চর মানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাই হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৬০পরিবারের। এছাড়া জাহানপুর ১০, জিন্নাগড় ৩ এবং চর আরকলমি ৪৭ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের ঠাই হয়েছে। এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের কাছে প্রত্যেকটি ঘর যেন স্বপ্নের ঠিকানা। আশ্রয়ন প্রল্পে বসবাস কারীরা নিজেদের ঘরের পাশে সবজি উৎপাদন ও ফল গাছ লাগিয়েছেন। নদীতে মৎস্য আহরণ, হাঁস মুরগি পালনসহ ক্ষেত খামারে কাজ করে নিশ্চিন্তে উপার্জন করে দিন যাপন করছে। এছাড়া গরু, ছাগল পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর তৃতীয় পর্যায়ে চরফ্যাশন উপজেলায় ৩৪০টি ঘরের জন্য বরাদ্দ আসে। তার মধ্যে হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নে ২টি আলাদা লোকেশনে ৯০টি, জাহানপুর ইউনিয়নের মাছঘাট এলাকা হিসেবে পরিচিত পাঁচকপাট স্লুইজ গেটের কাছাকাছি ৫০টি ঘর। চরমানিকা ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া মাছঘাট এলাকায় ৬০টি, জিন্নাগড় ইউনিয়নে ৩টি, নজরুলনগর ইউনিয়নের বজলুবাজার এলাকায় ৬০টি, ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে ৩৩টি মোট ৩১০টি নির্মাণাধীন ঘরের মধ্যে ১২০ টি ঘরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকী ১৯০ টি ঘরের কাজ প্রায় শেষের পথে। মাটি কমপ্যাক্ট না হবার কারণে ৩০টি ঘরের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি শুরু করা যাবে। নির্মাণ সমাপ্ত হওয়া ১২০ টি ঘরের চাবি ও জমির দলিল ইতোমধ্যে উপকার ভোগীদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব ঘরে নিরাপদে ঠাই পেয়েছেন ১২টি প্রতিবন্ধি পরিবার, ৪৮টি নদীভাঙ্গা পরিবার, ১৫টি স্বামী পরিত্যক্তা পরিবার, ২১টি শ্বশুর বাড়িতে আশ্রিত পরিবার এবং ২৪টি স্বামী- স্ত্রী সন্তনসহ অসহায় ভূমিহীন পরিবার। বাকি ১৯০টি ঘর ৩০ জুনের মধ্যে হস্তান্তরের জন্য উপকারভোগী বাছাই কার্যক্রম চলছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান বলেন- চরফ্যাশনে মোট ৩৪০ টি ঘরের মধ্যে ২৬০ টি ঘর খাস জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। ৮০ টি ঘরের জন্য জমি ক্রয় করা হয়েছে। মাটি কমপ্যাক্ট না হবার কারণে ৩০ টি ঘরের কাজ এখনই শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি শুরু করা যাবে। তিনি আরো বলেন- ঘর গুলি নির্মাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বাজারের সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ডের সিমেন্ট, টিএমটি বার রড, ভালো ইট, উন্নতমানের পিকেট খোয়া, ভালো মেহগনি কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। নিজের কাজ মনে করেই এসব কাজ করা হয়েছে। এসব দুস্থ পরিবার গুলো যেন এসব ঘরে বসবাস করে শান্তি পায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতি ১০টি পরিবারের জন্য একটি করে টিউবওয়েল স্থাপন করে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান- এসব প্রকল্পে অনেক ছোট ছোট বাচ্চা আছে এদের খেলা ধুলা করার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। তাদের কথা বিবেচনা করেই এসব প্রকল্পগুলোতে মিনি পার্ক নির্মাণ করা হবে, পার্ক নির্মাণের জন্য প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় কিছু খালি জায়গা রাখা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগ সারা বিশ্বের মধ্যে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে তিনি অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।