স্টাফ রিপোর্টারঃ উজানের ঢল, অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাব কিংবা সাধারণ জোয়ার এলেই তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা, রাস্তা-ঘাট এমনকি বসতঘরও। আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বা অতি বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। সামান্য কারণেই পানিবন্দী হয়ে পড়ে চার গ্রামের মানুষ। জোয়ার-ভাটায় বছরের ছয় মাসেরও বেশি সময় তাদের পানিবন্দী হয়ে কাটাতে হয়। এমন অবস্থায় তাদের খবর কেউ নেয় না। এমনই চিত্র দেখা যায় ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের গঙ্গাকীর্তি, দরিরাম শংকর, কালাকীর্তি ও বলরাম শূরা গ্রামে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন এ চার গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ। শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়টা তাদের কাটাতে হয় জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক আগে থেকেই বিকল্প বাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তারপরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি কেউ এখানে খোঁজও নেয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে উপকূলের বাসিন্দারের রক্ষায় ২০০৭ সালে ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তখন থেকেই বাঁধের বাইরে নতুন করে বসবাস শুরু করেন ভাঙন কবলিত মানুষ। চার গ্রামে বাঁধের বাইরে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বাঁধের বাইরের বসতি হওয়ায় জোয়ারের পানির সঙ্গে লড়াই করে জীবন কাটিয়ে আসছেন তারা। বছরের সাত মাসই তাদের কাটাতে হয় পানির মধ্যে। পানিবন্দী হয়েই কাটে তাদের জীবন। স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা ও ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, শুধু শুষ্ক মৌসুমে এখানে পানি ওঠে না। এছাড়া বছরের বাকি সময় আমরা পানিবন্দী থাকি। জোয়ারের পানি নেমে গেলেও, থেকে যায় দুর্ভোগ। স্থানীয় বাসিন্দা শরিফ বলেন, ১৬ বছর ধরে আমরা এভাবে পানির মধ্যে বসবাস করছি। কেউ আমাদের খোঁজও নেয় না। বলরাম সুরা গ্রামের মাহমুদা বেগম ও লাইলি বেগম বলেন, ঘরে যখন পানি ওঠে তখন রান্না করতে পারি না। হাস-মুরগি পালন করতে পারি না। সব ভাসাইয়া নিয়া যায়। জোয়ার এলেই আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের শিশুদের পানিতে পড়ে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছেনানা ধরনের পানিবাহিত রোগও। গঙ্গাকীর্তি গ্রামের গোলেনুর বেগম ও আমেনা বেগম বলেন, আমরা ১৫ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। আমাদের এখানে একটা বাঁধ নির্মাণ করা হলে আর এতো কষ্ট হতো না। জেলে সমিতির সভাপতি এরশাদ ফারাজি বলেন, চার গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের সদস্যই জেলে। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা চলে তাদের। কিন্তু জোয়ারের পানির সমস্যার কারণে বছরের পর বছর তারা কষ্ট করে যাচ্ছেন। ১০ হাজার মানুষের কষ্ট যেন কেউই দেখেন না। তাই বাঁধ নির্মাণ করা আমাদের অনেকদিনের দাবি। জোয়ার-ভাটার এ দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে এ দাবি ১৫ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়কবার গ্রামগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে দুই কিলোমিটারের একটি বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করলে আর সমস্যা থাকবে না। দ্রুতই সেখানে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।