ইমরান জিহাদ ::: বরিশাল নগরীর লঞ্চঘাট এলাকায় লুডু খেলার অপরাধে যুবককে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর আব্দুল মালেক তালুকদার। পরবর্তীতে ওই যুবকের পরিবারের সদস্যদের ডেকে জোরপূর্বক মুসলেকা রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার তথ্য ও ভিডিও মজিবর নামের এক চায়ের দোকানি সাংবাদিকদের দেয়ার কারনে মজিবর (৪৫), তার ছেলে রাকিব (২০) ও জামাই সাব্বিরের (২২) নামে হামলার অভিযোগ এনে কোতয়ালী মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন আব্দুল মালেক তালুকদার। এতে আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে। সেই মামলায় তাদের আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে লঞ্চঘাট এলাকায় পারাবত ১২ লঞ্চের তৃতীয় তলায় বসে লুডু খেলতে ছিলো ঘাটের ৪/৫ জন শ্রমিক ও স্থানীয় চায়ের দোকানি চুন্নু মল্লিকের ছেলে রাজু (২২)। এমন সময় ইন্সপেক্টর আব্দুল মালেক তালুকদারের নেতৃত্বাধীন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম এসে এলোপাথারি পিটানো শুরু করে। অতঃপর পিটুনি থেকে বাচঁতে কেউ নদিতে ঝাঁপ দেয়, কেউ আবার দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল গফফার তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে রাজুর মাথায় আঘাত করে। তখন রাজু নিজের মাথায় রক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়ে নদীতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতা রাজুকে উদ্ধার করে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
স্থানীয়া আরও জানায়- অতঃপর স্থানীয় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল মালেক তালুকদারসহ তার টিমকে ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে তাদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় মজিবর নামের দোকানি পুলিশ ও সাংবাদিকদের ফোন দেয় এবং নিজ ফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে আব্দুল মালেক তালুকদারের টিম স্থানীয় জনতার কাছে ভুল শিকার করে। পরে রাজুর চিকিৎসার সকল খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর খরচ নেয়ার জন্য মদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ে রাজুর স্বজনদের আসতে বলেন। স্বজনরা কার্যালয়ে সামনে পৌঁছালে তাদেরকে একটি খাবার হোটেলে ভিতরে নিয়ে সাটার আটকিয়ে জোরপূর্বক টিপ সই ও স্বাক্ষর রেখে হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়ে। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় বলে জানিয়েছেন আহত রাজুর শ্বশুর।
এ বিষয়ে আহত রাজু বলেন- আমরা লঞ্চঘাট এলাকায় পারাবত ১২ লঞ্চের তৃতীয় তলায় বসে লুডু খেলতে ছিলাম। এমন সময় ইন্সপেক্টর আব্দুল মালেক তালুকদারের নেতৃত্বাধীন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম এসে এলোপাথারি পিটানো শুরু করে। অতঃপর পিটুনি থেকে বাচঁতে কেউ নদিতে ঝাঁপ দেয়, কেউ আবার দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল গফফার তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। তখন আমি মাথায় রক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়ে নদীতে পড়ে যাই। পরে আমাকে কে উদ্ধার করে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খাবার হোটেলে ভিতরে নিয়ে সাটার আটকিয়ে জোরপূর্বক টিপ সই ও স্বাক্ষর রাখার বিষয়ে রাজুর স্ত্রী সুবর্না বলেন- আমার স্বামীকে হাসপাতালে পাঠানোর পর আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সামনে যেতে বলেন মালেক স্যার। আমরা গেলে একটি খাবার হোটেলে ভিতরে নিয়ে সাটার আটকিয়ে জোরপূর্বক টিপ সই ও স্বাক্ষর রেখে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন তিনি।
মজিবরের পরিবারে সূত্রে জানা যায়- মুজিবর নিজ হাতে ধারণ করা ওই ঘটনার ভিডিও সাংবাদিকদের দেয়ার কারনে সংবাদ প্রকাশ হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার তিন দিন পর মুজিবরসহ তার ছেলে রাকিব ও জামাই সাব্বিরের উপরে হামলার অভিযোগ এনে মামলায় নামধারী ৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৬০ জনকে আসামি করে কোতয়ালী মডেল থানায় হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এই মামলার ২ নম্বর আসামি রাকিব ও ৩ নম্বর আসামি সাব্বির ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো না বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
তারা আরো বলেন, মামলা দায়েরের দুই দিন আগে এক লোক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মজিবরে দোকানে এসে বলে ওই সব তথ্য ও ভিডিও আর কাউকে দিয়েন না এতে আপনার সমস্যা হবে। পরে মজিবর ভয়ে আতংকিত হয়ে বলে ভাই আমার কাছে এই ফোনে সকল ভিডিও আছে আপনি আপনার হাত থেকে ডিলেট করে দেন। পরবর্তীতে মুজিবরের নিজ হাতে ধারন করা ওই ঘটনার সকল তথ্য ও ভিডিও ডিলেট করে দেয়। তবে ওই সময়কার মজিবরের নিজ হাতে ধারণ করা একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
এই মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী মজিবরের পরিবার।
এ বিষয়ে জানতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর আব্দুল মালেক তালুকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেন নি।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল গফফার বলেন- আমি ওখানে ছিলাম। কিন্তু আমি কাউকে মারিনি। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা নিষেধ আছে। আপনাদের কোন কথা থাকলে এডি স্যারকে ফোন দেন। এ কথা বলেই তিনি তড়িঘড়ি করে কলটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ড বলেন, আমাদের একটি টিমের উপর হামলার ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা দোষি নাকি নির্দোষ তা আলাদত প্রমাণ করবে।