স্টাফ রিপোর্টারঃ
টানা ৫দিনের জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হলেও জলোচ্ছাস থেকে ভোলার চরাঞ্চলের হাজার হাজার মহিষকে সুরক্ষা দিয়য়ে আধুনিক কিল্লা। এ কিল্লা থাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বাতানিদের।
জানা গেছে, গত দুই মাসে ৮ দফা বন্যায় উপকূল প্লাবিত হলেও জোয়ারে ভেসে যায়নি কোন মহিষ। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি কোন মহিষের। এতে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তারা। বজ্রপাতেও নিহত হয়নি মহিষের বাতান।
ভলুমিয়ার চন্দ্র প্রসাদ ও ভেতুরিয়ার চর চটকিমারাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে বাতানিদের সাথে কথা বলে এমনি তথ্য পাওয়া গেছে। এ সময় বাতানিরা (মহিষ পালনকারি) চরাঞ্চলে আরও আধুনিক কিল্লা নির্মানের দাবী জানিয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেল, প্রতি বছরই মার্চ থেকে সেপ্টম্বর পর্যন্ত ঝড় জলোচ্ছাস বয়ে যায় ভোলার উপকূলের উপর দিয়ে। এতে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় শত শত মহিষ। কখনও বজ্রপাত বা পানিতে ডুবেই মৃত্যু হয় এসব মহিষের। এতে লোকসানের মুখে পড়তেন বাতানিরা। ঘূর্নিঝড় সিডর, আইলা, মহাশেন ও ইয়াসের প্রভাবে উপকূলে ৪-৫ ফুল জলোচ্ছোস হয়ে। ওইসব ঝড়ে মারা গেছে কয়েক হাজার মহিষের। এছাড়াও সুস্ক মৌসুম বাদে সারা বছরই উপকূলে আমবষ্যা এবং পূর্নিমার জো প্রভাবে প্লাবিত হয় উপকূল। তখন জোয়ারে ভসে যায় মহিষ, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যদিও মাটির কিল্লা রয়েছে কিন্তু সেগুলো টেকশই না থাকায় দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পায় না মহিষহুলো।
এ অবস্থায় মহিষের পরিবেশগত ও টেকসই উন্নয়ন এবং মহিষের মৃত্যু ও ক্ষতি এড়াতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট বাংলাদেশে প্রথম বারের মত নির্মিত করেছে আধুনিক কিল্লা।
গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে গত বছর এবং এ বছর আধুনিক সুবিধার ৩ টি কিল্লা ভোলার চর চটকিমারা, ভেলুমিয়ার চন্দ্র প্রসাদ ও মাঝের চরে নির্মান করে।
নদীর মাঝে দুর্গম চরেচরে পাকা ভবন, বজ্রনিরোধ দন্ড, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও সৌর বিদ্যুৎতায়ন সুবিধাসহ আধুনিক এ কিল্লা থাকায় প্রাকৃতিক যে কোন দুর্যোগে এখন রক্ষা পাচ্ছে মহিষ। এখানে মকিষের চিকিৎসার সস্থান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে দুধ দোহানোর ব্যবস্থা বাতানিদের খাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। এতে একদিকে যেমন মহিষ পালনে বাতানিদের আগ্রহ বেড়েছে অন্যদিকে বিপুল পরিমান সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। যে কারনে খুশি বাতানিরা।
বাতানিরা বলছেন, এ মাসে গত কয়েকদিনের লঘু চাপে উপকূল প্লাবিত হলেও ভেসে যায়নি কোন মহিষ। সুরক্ষিত ছিলো তাদের মহিষ।
চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের বাতানি রেজিউল হাওলাদার বলেন, আমার ৪০টি মহিষ রয়েছে, আগের সেসব মজিষ মাটির বিল্লার রাখতাম। সেই কিল্লাও পানিকে ডুবে যেত, ভেসে যেত মহিষ, আবার চলাবদ্ধতায় মজিষের ওষুখ হতো। এতে প্রতি বছরই আমাদর লোকসান গুনতে কতো। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হতাম।
কিন্তু এখন আধুনিক কিল্লা নির্মান করায় আমাদের মজিষ অনেক নিরাপদ এবং সুরক্ষিত।
বাতানি বশার মাঝি বলেন, আমার ৩৫টি থাকলেও ঝড়-জলোচ্ছাসের সময় সেহুলো কোথায় রাখবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতাম, এখন আমরা চিন্তামুক্ত। আমাদের চরে আধুনিক কিল্লা হয়েছে। একই কথা বলেন, কামরুল, মাইনুদ্দিন, ইব্রাহিমসহ অন্য বাতনরা। তাদরর দাবী এ ধরনের আধুনিক কিল্লা যেন আরো নির্মান হয়।
জানা গেছে, ভোলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা পালন করছে মহিষ। বিশেষ করে মহিষের উৎপাদিত দুধ বিক্রির টাকায় বাতানিদের জীবিকা চলে।
চরাঞ্চলের বিপুল পরিমান জনগোষ্ঠীর জীবিকা নিশ্চিতে ভবিষ্যতে অরও আধুনিক কিল্লা নির্মানের কথা ভাছে জিজেইউস এর সহকারি পরিচালক ডাঃ তরুন কুমার পাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আধুনিক কিল্লা নির্মান হয়েছে। এটি উপকূলের সব স্থানে নির্মিত হলে বাতানিরা উপকৃত হবে। মজিষ পালন আরো সম্প্রসারন হবে, সম্ভাবনা তৈরী হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থা ভোলার ৩ টি চরে যে আধুনিক কিল্লা নির্মান করেছে, তা মহিষ পালনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। এসব কিল্লা অনেকটাই নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। যে কারনে দুর্যোগের সময় মহিষ ভেসে যাওয়া, রোগে আক্রান্ত বা মহিষের মৃত্যু কম কবে যাবে।
এদিকে, দ্বীপজেলা ভোলায় ২৫ টি চরে এক লাখের অধিক মহিষ রয়েছে। যা থেকে প্রতি বছরই ১৬ হাজার মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে।