ঢাকার আশুলিয়ায় একটি স্কুলে প্রেম ঘটিত বিষয়টি মেয়ের পরিবারকে জানানোকে কেন্দ্র করে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে শিক্ষককে হত্যা করেছে তারই ছাত্র। এ ঘটনায় হাজী স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক হত্যার বিচারের দাবিতে স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে আশুলিয়ার জামগড়া চিত্রশাইল এলাকার ওই স্কুলের সামনে শিক্ষক হত্যার বিচারের দাবিতে এ মানববন্ধন করেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
জানা যায়, গত (২৫ জুন) দুপুর ২টার দিকে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ওইদিন মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। হঠাৎ জিতু এসে ক্রিকেট খেলার একটি স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউতে) ভর্তি করা হয়। পরে সেখানেই আজ ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের শিক্ষক উৎপল সরকার ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। তিনি ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে বিভিন্ন ছেলেদের চুল কাটা মেয়েদের নখ কাটাসহ বিভিন্ন দৈনিক ব্যাপারগুলো দেখার দায়িত্ব ছিলো ওই শিক্ষকের। এ জন্য সাধারণভাবে অনেক শিক্ষার্থী স্যারের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু সেই ক্ষোভের কারণে ক্লাস টেনে পড়ুয়া ছাত্র একজন শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের আজকের কর্মসূচির মেইন উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের শিক্ষক হত্যাকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই। সেই সাথে স্যারের পরিবারকে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমরা যারা আন্দোলনে নেমেছি আমাদেরকে যেনো নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিক্ষক হত্যার বিচার চেয়ে এবং ওই ছাত্রকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র শিক্ষক হত্যার বর্ণনা বলেন, আসলে সেদিন আমাদের কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে মেয়েদের খেলা চলছিল। আমরা সবাই খেলা দেখার জন্য মাঠের পাশেই স্যারদের সাথে বসে ছিলাম। আমাদের উৎপল সরকার স্যারও সেখানে বসে ছিলেন। ওই ছেলেটা স্যারকে মারার উদ্দেশ্য করেই আসছিল। সে সবার সামনে দিয়ে গিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে স্যারকে অতর্কিতভাবে মাথায় এবং বুকে আঘাত করার কারণে মাথা ফেটে যায় এবং কলিজা ফেটে যায়। আসলে যে কারণে ঘটনা ঘটেছে সেটা হচ্ছে প্রেম সংক্রান্ত ঘটনা। আমাদের ক্লাসেই পড়ে মেয়েটার সাথে জিতুর নামে ওই ছেলেটার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু উৎপল সরকার স্যার উনি হচ্ছে পরিবেশ কমিটির প্রতিনিধি তার দায়িত্ব হলো কেউ যদি এই ধরনের অসৎ আচরণ করলে স্যার এই বিষয়গুলো জানতে পেরে মেয়ের পরিবারকে এই বিষয়গুলো অবগত করেছিল। এটাই স্যারের দোষ ছিল। যে কারণে ওই ছেলে আমাদের স্যারের ওপর হামলা চালায়। যার ফলে আমাদের মাঝে স্যার নেই।
অভিযুক্ত জিতু চিত্রশালাই এলাকার উজ্জ্বল হাজীর ছেলে। সে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যে অপরাধী সে শাস্তি পাক। আজ আমাদের সহকর্মীর উপর হামলা হয়েছে কালকে আমাদের উপরেও হতে পারে। যেকোনো সময় যেকোনো সহকর্মীর উপর হতে পারে। তাই আমরা শিক্ষকরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে আসামিকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির জোড়র দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আজাদ বলেন, মূলত একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত গুণী শিক্ষক তার কর্মস্থল নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে ব্যথিত লজ্জিত এবং ধিক্কার জানাচ্ছি। সেই সাথে আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সুবিচার প্রতিষ্ঠার দাবি করছি। আর ভবিষ্যতে যেন এ রকম লজ্জাকর ঘটনা আমাদের সমাজে না ঘটে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার (উপপরিদর্শক) এস আই এমদাদুল হক বলেন, শিক্ষক হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছে। পরে আমরা তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেই। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত জিতুসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।