জিহাদ হোসেন ::: বরিশাল নগরীর ফুটপাতের ছিন্নমূল মানুষগুলো খাবার ও বাসস্থানের সংকটে জড়িয়ে পরছেন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। বেশির ভাগ পথশিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদের বেশির ভাগ মাদকাসক্তির প্রভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। এরা গাঁজা, ড্যান্ডি সহ অন্য মাদকদ্রব্য সেবন করে থাকে। এতে নষ্ট হতে চলেছে তাদের বোধ, বুদ্ধি, সুস্থ চিন্তা করবার মানসিকতা। এ সব ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ শিশু, ৩০ শতাংশ বৃদ্ধ, নারী ও পুরুষ। যাদের নেই নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা।
সোমবার (২১ আগস্ট) নগরীর লঞ্চঘাট ও চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকার কয়েকটি স্পটে ঘুরে ছিন্নমূল শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই স্থানটিতে ৮০/৮৫ জন ছিন্নমূল মানুষের বসবাস। এরা চরকাউয়া খেয়াঘাট যাত্রী ছাউনি-লঞ্চ টার্মিনালের পল্টন এবং খোলা আকাশের ফুটপথকে থাকার জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ সব ছিন্নমূলদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পথশিশু ও বয়স্ক মাদকাসক্ত, ৪৫ শতাংশ ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ২০ শতাংশ শিশু প্রতিদিন গোসলহীন থাকে, ১০ শতাংশ বৃদ্ধ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫০ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই ও ১৫ শতাংশ শিশু ও বয়স্ক অসুস্থতায় ডাক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারে না।
আরো জানা যায়, সহজলভ্য এই মাদক ক্ষুধামন্দা তৈরি করে। এ জন্য খাবারের ‘যন্ত্রণা ভুলে থাকতে’ তারা মাদক গ্রহণ করে। মাদকাসক্ত এই শিশুদের একজন তবলা (ছদ্মনাম)। জন্মের পর থেকে বরিশাল নদী বন্দর তার ঠিকানা। বয়স জানা নেই, তবে তার অনুমান ৯ বছর হবে। এই বয়সে জীবনের অনেক রূপ দেখেছে সে। প্লাস্টিক কুড়িয়ে, ছিন্নমূল চারীদের কাছে হাত পেতে, যা পায় তাই দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। পথে ঘুরতে থাকে পেটের দায়ে। এভাবে জীবন তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি।
সরজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়- ২০/২২ জন পথশিশু ও স্থানীয় কয়েকজন যুবক গোল হয়ে বসে তাস খেলায় ব্যস্ত। অন্য দিকে রাব্বি, শাওন, তবলা, গান ওয়ালা সাফিন, নামের ৪ পথশিশু সিগারেটের ভিতরে কি যেন ডুকাতে ব্যস্ত। ওদের মধ্যে থেকে এক জন উঠে বলল লাগবে ভাই। কি আছে উত্তরে বললো, গাঁজা ১০০ টাকা এক পুরিয়া, অন্য কিছু লাগলেও দেওয়া যাবে ।
হেলাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, বরিশাল লঞ্চঘাটে বেশিরভাগ ছিন্নমূল মানুষ গুলো খাবার ও পোশাক সংকটে ভুগছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কয়েকজন অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তি পথশিশুদের দিয়ে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনসহ জুয়ার আসরে উৎসাহিত করছে। এবং জুয়া ও মাদকের টাকা যোগাড়ে তারা চুরি, ছিনতাইসহ অসৎ পথে টাকা উপার্জনে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদফতর বরিশালের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের (শিশু আইন) অনুযায়ী, সমাজ সেবার প্রত্যয়নে যে সংস্থা, শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্ৰ রয়েছে আমরা তাদেকে সেখানে ভর্তি করি কিন্তু তারা স্কুলের কথা বলে ঘুড়তে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায়। তবে বিষয়টি আমি আবার ও জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে দেখবো। এবং শুক্রবার আমি ওই স্থানে যাবো, যেসব শিশু ও বৃদ্ধ চিকিৎসা অভাবে ভুগছেন তারা হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের চিকিৎসার খরচ আমাদের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।
এ বিষয় বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। এবং শিশুরা যাতে কোনো অপরাধে না জড়ায় সে বিষয়টি আমরা দেখবো।