স্টাফ রিপোর্টারঃগ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) এর পক্ষে নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন এবং BRAC (কৃত্রিম প্রজনন এন্টারপ্রাইজ) এর মধ্যে সমোঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো GJUS-RMTP (Safe Meat & Dairy products) প্রকল্প। এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ’র সহকারী মহাব্যাবস্থাপক হাবিবুর রহমান, লাইভস্টক RMTP পিকেমসএফ’র সেক্টর স্পেশালিস্ট ডা: এস এম নিয়াজ মাহমুদ, পিকেএসএফ (কার্যক্রম)’র ডেপুটি ম্যানেজার মজনু সরকার, ব্র্যাক’র ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার ডা: মো: শওকত আলীসহ ব্র্যাকের আরো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আরএমটিপি প্রকল্পের আটটি সহযোগী সংস্থা থেকে প্রতিনিধিবৃন্দ। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকায় ডা: মতিয়ার রহমান (ব্র্যাক) এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডা: এস এম নিয়াজ মাহমুদ (পিকেএসএফ)।
প্রধান অতিথি মো হাবিবুর রহমান বলেন, এই চুক্তির ফলে চরাঞ্চল পর্যায়ে তথা সারা বাংলাদেশে কৃত্রিম প্রজননের ফলে উন্নত জাত উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ মাংস এবং দুধ উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পরিশেষে সকল সহযোগী সংস্থাকে একসাথে কাজ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন সেই সাথে সবার সুস্থ্যতা কামনা করে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষনা করেন।
BRAC এর সাথে পিকেএসএফ এর সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর- FAO-এর সুপারিশ অনুযায়ী একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম ২৫০মিলি দুধ ও ১২০ গ্রাম মাংস খাওয়া প্রয়োজন। DLS-২০২২ এর তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশজ উৎপাদিত দুধ ও মাংস চাহিদা অনুযায়ী ১৯৩.৩৮ মিলি এবং ১৩৬.১৮ গ্রাম সরবরাহ করছে। এ তথ্যানুযায়ী দেশে এখনো দুধ উৎপাদনে প্রায় ২২.৬৪% ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে চাহিদা অনুযায়ী মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা বললেও ভোক্ষণের দিক দিয়ে অনেক পিছনে রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ফুড অর্গাইজেশনের মতে, মানবদেহের সুস্থতার জন্য প্রতি বছর মাথাপিছু কমপক্ষে ৪৮ কেজি মাংস খাওয়ার প্রয়োজন, যেখানে বর্তমানে দেশে মানুষ গড়ে ৪-৪.৫ কেজি মাংস খাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে বছরে প্রায় ১০-১২ হাজার টন গোমাংস এবং ১২ হাজার মেট্রিক টন মহিষের মাংস আমদানী হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে প্রতি কেজি গো-মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০-৭০০টাকায়, খাসীর মাংস ৯০০-৯৫০ টাকায় এবং মহিষের মাংস ৫০০-৫৫০টাকায়। এ তথ্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে মাংস উৎপাদনেও আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত দ্রুত উপায় হচ্ছে দেশের সকল গবাদীপ্রাণীকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় এনে উন্নতজাতের সমজাতীয় প্রাণির সীমেন দিয়ে দেশিজাতের প্রাণির জাত উন্নয়ন করা। কেননা দেশে এখনো প্রায় ৬০-৭০% গরু কৃত্রিম প্রজননের আওতার বাহিরে রয়েছে এবং মহিষ, ছাগল এবং ভেড়া ক্ষেত্রে এ সংখ্যা প্রায় ১০০%।
এই কৃত্রিম প্রজননের বাহিরে থাকা দেশের প্রাণিঘণ ১২ জেলার (ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নওগা, বগুড়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, ঠাকুরগাও) ৩৬টি উপজেলার ২লক্ষ খামারীর অধিকাংশ গবাদি প্রাণিকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় এনে তাদের জাত উন্নয়নসহ এ সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বতমানে পিকেএসএফ, IFAD, DANIDA এবং পিকেএসএফ এর যৌথ অর্থায়নে পরিচালিত Rural Microenterprise Transformation Project (RMTP) এর আওতায় ৮টি সহযোগী সংস্থা (এফডিএ, জিজেইউএস, ইপসা, গাক, এনডিপি, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, ইএসডিও ও দাবি মৌলিক উন্নয়ন)-এর মাধ্যমে ৮টি ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মাঠ পযায়ে বণিত কৃত্রিম প্রজনন কাযক্রম আগামী ৩বছর কাযকরিভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অদ্য পিকেএসএফ এর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্যতম গবাদিপ্রাণির সীমেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান BRAC Artificial Insemination Enterprise এর সাথে ৮টি সহযোগী সংস্থার (এনজিও) একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আশা করি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পাশাপাশি পিকেএসএফ, ব্র্যাক এবং সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে পরিচালিত বণিত কার্ক্রম মাঠ পযায়ে সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে। আর এই কাযক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন প্রাণিসম্পদের জাত উন্নয়ন হবে, প্রাণির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে খামারীদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের প্রাণিজ পুষ্টির (দুধ ও মাংস) ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ হবে।