ফরিদপুরের মধুখালীতে নিখোঁজের চারদিন পর এক যুবককে প্রেমিকাসহ কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করেছে পুুলিশ। বিশ্ব সাহা (২২) নামে সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই যুবক তার মুসলিম ধর্মাবলম্বী প্রেমিকা লাবনী খাতুন (১৯) কে সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে বিয়ে করে। কিন্তু পুলিশ তাদের দাবি গ্রাহ্য করেনি। পরিবারের মুচলেকা নিয়ে পুলিশ তাদের পৃথক করতে নিজ নিজ পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করেছে।
ওই যুবকের একজন আত্মীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ধনাঢ্য বাবার ইচ্ছাতেই বিশ্বকে লাবনীর নিকট হতে ছাড়িয়ে নেয়া হয়েছে এবং স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের মধ্যস্থতায় পাঁচ লাখ টাকারও বেশি জরিমানা দিতে হয়েছে মেয়ের পরিবারকে। তবে মেয়েটির পরিবার টাকা গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেনি। বিষয়টি মিটমাট করে ফেলা হয়েছে বলে তারা সাংবাদিকদের জানান। ধনাঢ্য ওই যুবকের প্রেমিকা মেয়েটি শুধু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীই নন, সাধারণ কৃষক পরিবারের মেয়ে। প্রভাবশালীদের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, মধুখালী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বৈকুন্ঠপুরের বাসিন্দা রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী ও ইট ভাটা মালিক সুজিত সাহা গত ৭ জুন তার ছেলে বিশ্ব সাহা (২৫) নিখোঁজ হয়ে গেছে মর্মে মধুখালী থানায় একটি জিডি করেন।
সুজিত সাহা জিডিতে জানান, সকালে তার ছেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। মধুখালীর ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সুজিত সাহার জিডির পর ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে পুলিশ।
জানা গেছে, বিশ্ব সাহা নওপাড়া ডিগ্রী কলেজের বিএ ১ম বর্ষের ছাত্র। তার সাথে একই কলেজের সহপাঠী লাবনী খাতুন নামে এক মেয়ের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। পুলিশের তদন্তকারী দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও নিজস্ব সোর্সে খোঁজখবর নিয়ে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে। এরপর শুক্রবার রাতে তাদের দুজনকে কক্সবাজারের হোটেল সিফাত নামে একটি আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে দুজনকে একসাথে আটক করে। এ সময় লাবনীকে সিঁথিতে সিঁদুর মাখা অবস্থায় পাওয়া যায়। তারা স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছে বলেও জানায়।
তবে বিশ্ব সাহার বাবা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ভিন্ন ধর্মের এই কৃষক পরিবারের মেয়েকে গৃহবধূ হিসেবে মানতে রাজি হননি। তার অনুরোধে প্রেমিক যুগলকে পৃথক করানোর উদ্যোগ নেয় পুলিশ। মোটা অংকের টাকা খরচ করে বিষয়টি রফা করা হয়।
বিশ্বের পিসিমা সাংবাদিকদের জানান, ঝামেলা মিটে গেছে। মেয়ের পরিবারকে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা দিতে হয়েছে মীমাংসার জন্য।
লাবনীর বড় বোন রাবেয়া খাতুন বলেন, একটু ঝামেলা হয়েছিলো। সেটি আমরা নিজেরাই মিটমাট করে ফেলেছি। কাজেই আর ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না।
বিষয়টি জানতে সুজিত সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কক্সবাজার থেকে বিশ্ব ও লাবনীর আটকের খবর অস্বীকার করে বলেন, তার ছেলে বিশ্ব সাহা রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। তাকে খুঁজে না পেয়ে থানায় জিডি করেছিলাম। এরপর মাওয়া ঘাট থেকে মধুখালী থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
মধুখালী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কামরুজ্জামান বাবু এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তারা দুজনেই আমার এলাকার। আমি ভোটের রাজনীতি করি। তাই এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।
অবশ্য মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ছেলের বাবার জিডির সূত্র ধরে তাদের সন্ধান চালিয়ে দুজনকেই কক্সবাজারের হোটেল সিফাত নামে একটি আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর কক্সবাজার থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের মধুখালীতে ফিরিয়ে এনে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে, প্রেমিক যুগলের চারদিন নিখোঁজ থাকা ও ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ের পর মোটা অংকের জরিমানায় তাদের ছাড়াছাড়ির খবরটি মধুখালীতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।